- বিমাতার আদর
- যিন্দা লাশ
- চোর দরবেশ
- দরবেশ ও বাঘ
- যার নাই উস্তাদ তার উস্তাদ শয়তান
- বেদআতী মোল্লাহ সমাচার
- জমিদার বাবুর 'আল্লাহ' দেখার ঘটনা
পাশ্চাত্য প্রভাবিত অনেক বুদ্ধিজীবি আজকাল মোল্লাদেরকে তুচ্ছ জ্ঞান করে থাকেন। আগেকালের যুগেও তাই করা হত।
এক বাদশাহর ঘটনা এখানে উল্লেখযোগ্য। বাদশাহ বলতেন, “আলেমদের জ্ঞানের গভীরতার কোন তুলনা হয় না”। কিন্তু তার মন্ত্রী এ ব্যাপারে মতভেদ করতেন।
একদিন বাদশাহ পুকুরের পাড়ে সান্ধ্য ভ্রমণ করছিলেন। তখন অযত্নে প্রতিপালিত মলিন বেশে বগলে কিতাব নিয়ে মাদ্রাসার এক ছাত্র সেখান দিয়ে অতিক্রম করছিল। বাদশাহ তাকে কাছে ডাকলেন এবং মন্ত্রীকে প্রশ্ন করলেন, “মন্ত্রী বলুন তো এই পুকুরে কত গ্লাস পানি আছে?”
মন্ত্রী বললেন, “প্রথমে এই পুকুরের পাশে অন্য একটি নতুন পুকুর খুঁড়তে হবে। তারপর গ্লাস ভরে ভরে এই পানি সেই পুকুরে রাখতে হবে। পানি নি:শ্বেষ হলে বুঝা যাবে এই পুকুরে কত গ্লাস পানি আছে”।
বাদাশাহ তখন মাদ্রাসার ছাত্রটিকে জিজ্ঞাসা করলেন, “মৌলবী সাহেব, আপনি কি বলতে পারেন এই পুকুরে কত গ্লাস পানি আছে?”
ছাত্রটি সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিল, “এই প্রশ্নটি আসলে ত্রুটিপূর্ণ। কারণ এখানে বলা হয় নি গ্লাসটি কত বড়। যদি গ্লাসটি পুকুরের সমান হয় তাহলে নি:সন্দেহে এই পুকুরে এক গ্লাস পানি আছে। আর যদি গ্লাসটি পুকুরের অর্ধেক হয় তবে দুই গ্লাস পানি আছে। এভাবে পুকুর এবং গ্লাসের আনুপাতিক মাপ অনুযায়ী হিসাব করে নিন পুকুরে কত গ্লাস পানি আছে”।
বাদশাহ মন্ত্রীকে বললেন, “দেখুন এবার জ্ঞানী কাকে বলে। প্রশ্ন অনুযায়ী আপনার জবাবটি যথেষ্ট হতে পারে নি। অথচ সাধারণ একজন মাদ্রাসার ছাত্র একটি মাত্র সংক্ষিপ্ত জবাবে সমস্ত জটিলতা নিরসর করে দিয়েছে। সুতরাং প্রকৃত জ্ঞানী কে একবার ভেবে দেখুন”।
আজাকলের বুদ্ধিজীবিগণের ভ্রম এখানেই যে, অভিজ্ঞতার আলোকে তারা যেখানে পৌঁছতে পারেন তাকে জ্ঞানের ফল মনে করে থাকেন। অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞানকে তারা একই বস্তু মনে করেন। অথচ এই দুইটি জিনিস পরস্পর সম্পূর্ণ পৃথক। অভিজ্ঞতা এক জিনিস আর জ্ঞান অন্য জিনিস। মোল্লাগণ যেহেতু অভিজ্ঞতার পালায় পড়েননি তাই তাদের অভিজ্ঞতা থাকে না। তবে তারা পরিপূর্ণ জ্ঞানের অধিকারী হয়ে থাকেন। তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ হল এই যে, জীবনের পরিণাম সম্পর্কে তারা সচেতন। আর জ্ঞান একথা বলে দেয় যে, যারা জীবনের পরিণাম সম্পর্কে সচেতন তারাই জ্ঞানী।
আল এফাযাতুল ইয়াউমিয়্যাহ; খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ১০০।
0 comments:
Post a Comment