Wednesday, June 8, 2011

মুসলমানের হাসি : ০৪ - দরবেশ ও বাঘ

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি ভাল আছেন।
ইসলাম নিয়ে লেখা আমার ধারাবাহিক পোষ্টগুলোর এটি পরবর্তী পোষ্ট। পূর্ববর্তীগুলো নিচে দেওয়া হল। না দেখলে এখনই দেখে নিন।


‍‍‌‌‌‌‌‌দরবেশ ও বাঘ


ইংরেজ এই উপমহাদেশের একটি অকৃতজ্ঞ জাতিকে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল। আর অপর একটি কৃতজ্ঞ জাতিকে পশ্চাৎপদ করে রেখেছিল; কিন' এর ফল যা হয়েছিল তা দেখে পরবর্তী কালে এই ইংরেজগণ শত আফসোস আর দুঃখ করেছে।
এক উচ্চ পর্যায়ের ইংরেজ হাকিম গোরক্ষপুরে সফরে গিয়েছিলেন। সেখানকার জামিদারের ম্যানেজারের কাছে এ প্রসঙ্গে তিনি দুঃখ করে একটি ঘটনা বলেছিলেন। ঘটনাটি হল নিম্নরুপ :
নির্জন কক্ষে এক দরবেশ বাস করতেন। সেই কক্ষে এক ইঁদুর এসে বাচ্চা প্রসব করলো। পরে দরবেশকে দেখতে পেয়ে সব কয়টি পালিয়ে গেল। কিন' একটি ইঁদুরের বাচ্চা রয়ে গেল। বুযুর্গের দয়া হল। তিনি বাচ্চাটিকে দুধ ইত্যাদি পান করাতে লাগলেন। একদিন দেখলেন বাচ্চাটি মন ভার করে বসে আছে। তিনি তার দু:খের কারণ জিজ্ঞাসা করলেন।
বাচ্চা বললো, “আজ একটা বিরাট ইঁদুর আমাকে ধাওয়া করেছিল, আজ কোন রকমে প্রাণ বাঁচিয়েছি; কিন্তু একদিন সে আমার উপর জয়ী হবে এবং আমার প্রাণ বধ করবে। তাই আমার দু:খ।”
বুযুর্গ বললেন, “তাহলে আমি এখন তোর জন্যে কী করতে পারি?”
বাচ্চা বললো, “ আমাকে বিড়াল বানিয়ে দিন।”
বুযুর্গ তখন আল্লাহ পাকের দরবারে দোয়া করলেন এবং তার শরীরে হাত বুলালেন সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাটি একটি বিড়ালে পরিণত হয়ে গেল।
কয়েকদিন পর দরবেশ দেখলেন বিড়ালটি বিমর্ষ মনে বসে আছে। তিনি আবার তার দু:খের কারণ জিজ্ঞাসা করলেন।
বিড়াল বললো, “ আজ মহল্লাহর গলিতে গিয়েছিলাম। এক কুকুর আমাকে তাড়া করেছিল। বড় কষ্ট করে প্রাণ বাঁচিয়ে এসেছি। কিন্তু এভাবে কতদিন প্রাণ বাঁচাতে পারবো; তাই আমি চিন্তিত।”
দরবেশ বললেন, “তাহলে তুই এখন কী চাস?”
বিড়াল বললো, “আমাকে কুকুর বানিয়ে দিন।”
বুযুর্গ আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন এবং বিড়ালের গায়ে হাত বুলালেন অমনি বিড়াল কুকুর হয়ে গেল।
পাঁচ সাত দিন পর দেখলেন কুকুরটি বিষন্ন মনে বসে আছে। তিনি কারণ জিজ্ঞাসা করলেন।
কুকুর বললো, “আজ আমি জঙ্গলে গিয়েছিলাম সেখানে একটি নেকড়ে আমার উপর হামলা করেছিল।”
বুযুর্গ বললেন, “তাহলে তুই এখন কী চাস?”
কুকুর বললো, “আমাকে নেকড়ে বানিয়ে দিন।”
বুযুর্গ দোয়া করে তার উপরে হাত বুলালেন। আর অমনি কুকুরটি নেকড়ে হয়ে গেল।
কয়েকদিন পর দেখলেন আবার সে মন খারাপ করে বসে আছে।
বুযুর্গ জিজ্ঞাসা করলেন, “মন খারাপ হওয়ার কারণ কী?”
নেকড়ে বললো, “আমি জঙ্গলে গিয়েছিলাম সেখানে একটি বাঘ আমাকে ফেড়ে খাওয়ার জন্যে তাড়া করেছিল।”
বুযুর্গ বললেন, “এখন তুই কী চাস?”
নেকড়ে বললো, “আমাকে বাঘ বানিয়ে দিন।”
দরবেশ আল্লাহর দরবারে দোয়া করে তার গায়ে হাত বুলালেন তখন নেকড়েটি বাঘ হয়ে গেল। বাঘ হয়ে সে মনের আনন্দে জঙ্গলে গেল। জঙ্গলে যেতেই আগের সেই বাঘটি তাকে দেখে বলে উঠলো, “আরে বহুরূপী! খুব রূপ বদলিয়েছিস বটে, কিন্তু তোর মধ্যে আর আমার মধ্যে এখনও পার্থক্য রয়েছে। তুই হলি মানুষের তৈরী বাঘ, আর আমি হলাম আল্লাহর তৈরী বাঘ। (দরবেশের তাছাররূফের মাধ্যমে তৈরী বাঘ আর) আল্লাহর তৈরী আসল বাঘের ক্ষমতা এখনই পরীক্ষা হবে। হাকীকত (বাস্তবতা) এখনই খুলে যাবে দাঁড়া!”
এই কথা শুনে সে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললো, “তাহলে আমার প্রাণে বাঁচার কি কোন পথ নাই?”
বাঘ বললো, “একটি মাত্র পথ আছে। আগে তুই তাকে খতম করে আয় যে খোদার উপর খোদকারী করেছে, তোকে ইঁদুর থেকে বাঘ বানিয়েছে। আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে যে হস্তক্ষেপ করেছে তাকে খতম করলেই তোকে ছাড়বো।”
দরবেশের তৈরী বাঘটি চললো। জঙ্গল থেকে দরবেশের কামরায় এসে উপস্থিত হলো। বুযুর্গ দেখলেন বাঘটি নখ বাহির করে থাবা প্রসস্থ করে সামনে এস ঘড় ঘড় করছে।
তিনি বললেন, “আজ তোর এ কি অবস্থা ?”
বাঘটি বললো, “আজ তোমকে খাবো।”
বুযুর্গ বললেন, “আমার আগের সকল দয়া এবং উপকারের কথা কি ভুলে গিয়েছিস?”
বাঘটি বললো, “ধ্যাৎ তোর উপকার! এখন আমার জান যায়, উপকারের কথা ভেবে জান হারাতে পারি না। সেই বাঘের সঙ্গে আবার দেখা হয়েছে। সে হলো আসল বাঘ। আর আমি যে ইঁদুর থেকে বাঘের রূপ ধারণ করেছি তা সে জানতে পেরেছে। আমাকে বলেছে, “আল্লাহর সৃষ্টিতে যে হস্তক্ষেপ করে তোকে ইঁদুর থেকে বাঘ বানিয়েছে তাকে খতম করে আয় না হলে তোর রক্ষা নাই।”
বুযুর্গ বললেন, “ও আচ্ছা এই কথা ? ঠিক আছে তুমি বস, স্থির হও। তোমার জান রক্ষা হবে। আমি ব্যবস্থা করছি।”
তখন এই বাঘ স্থির হয়ে বসলো। বুযুর্গ সুযোগ পেয়ে দোয়া করলেন এবং তার গায়ে হাত বুলালেন। অমনি বাঘ আবার ইঁদুর হয়ে সকল বিশৃঙ্খলা দূর হয়ে আবার শান্তি ফিরে আসলো।

এই ঘটনা ব্যক্ত করে সেই হাকিম সাহেব বললেন,
এটা আমাদেরই দোষ যে আমরা এই অকৃতজ্ঞ জাতিকে অগ্রসর করতে এমন এক স্থানে পৌঁছিয়ে দিয়েছি যেখানে দাঁড়িয়ে আজ তারা আমাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতা অপব্যবহার করে চলেছে। এই জাতিটি বাস্তবিকই অকৃতজ্ঞ।
সুতরাং এই ঘটনা থেকে মুসলানদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিৎ।

সংকলিত : - আল এফাযাতুল এওয়ামিয়াহ, খন্ড: ৫, পৃ: ১৯৮।

0 comments:

Post a Comment

 

© 2009 Islam And Computing । Science without Religion is Lame, Religion without Science is Blind | Design by: Islam And Computing

^Back to Top