যতই তাজ্জবের বিষয় মনে হোক, দ্বীনের সহজ-সরল বিষয়গুলো নিয়ে সাধারণ মানুষের অজ্ঞতার সীমা-পরিসীমা নেই। কোনো কোনো এলাকার মানুষের ধারণা, তাওবা করলে কিংবা তাওবা করানো হলে মওত এসে যায়। তারা মনে করে, তাওবা মৃত্যুর পূর্বে করার বিষয়, এর পূর্বে নয়। নাউযুবিল্লাহ মিন যালিকা।
এ ধারণা সম্পূর্ণ অজ্ঞতাপ্রসূত; বরং তাওবা ও ইস্তিগফার মুমিন জীবনের সার্বক্ষণিক ওযীফা। হাদীসে এসেছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিনে সত্তর থেকে এক শতবার তাওবা-ইস্তিগফার করতেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬৩০৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৭০২)
কেয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত তাওবার দরজা খোলা থাকবে।
তওবাতে বিলম্ব করা গুনাহ। এরপরও আল্লাহ তাআলা সব সময়ের জন্যই তওবার দরজা খোলা রেখেছেন। বান্দা যখন চায় তখনই তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে পারে। যখন মৃত্যু উপস্থিত হবে সে সময়ের তওবা কবুল হওয়ার প্রতিশ্রুতি নেই তাই তওবাতে বিলম্ব করা বড় ক্ষতির বিষয়। কারণ আমাদের কারো জানা নেই, কখন মৃত্যু উপস্থিত হবে। তওবা মৃত্যু নয়; বরং তা হল মুমিন বান্দার জীবন।
যে কোনো ধরনের গুনাহ ও আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন-এমন কাজ থেকে তাওবা করা মানে হল, ঐ গুনাহ ছেড়ে দেওয়া। কৃত গুনাহর কারণে অনুতপ্ত হওয়া এবং ভবিষ্যতে তা না করার সুদৃঢ় সংকল্প করা। আর গুনাহ বান্দার হক সংক্রান্ত হয় তাহলে তা থেকে দায়মুক্ত হওয়া।
তাওবার ব্যাখ্যা থেকেও বোঝা যায় যে, এটি প্রত্যেক মুমিনের জন্য সব সময়ের আমল।
একটি ভুল কথা
হাঁচি এল মানে কেউ স্মরণ করছে!
কারো হাঁচি এলে বা খাওয়ার সময় গলায় কিছু আটকে গেল বলা হয় যে, কেউ তাকে স্মরণ করছে।
বাস্তবে এটি একটি ভিত্তিহীন কথা। হাঁচি আসা ও গলায় খাবার আটকে যাওয়ার সাথে কারো স্মরণ করার কোনো সম্পর্ক নেই। অতএব এই ধরনের ভিত্তিহীন কথা না বলা উচিত।
একটি বানোয়াট কিসসা
একজন বেদআতী ওয়ায়েজ হযরত আবদুল কাদের জিলানী রাহ.-এর ফযীলত বর্ণনা করতে গিয়ে এই কিসসার অবতারণা করেছেন যে, নাউযুবিল্লাহ-আল্লাহ তাআলার নাকি একবার মানুষের গোস্ত খাওয়ার ইচ্ছা হল। তখন তিনি হযরত মুসা আ.কে আদেশ দিলেন, যাও, মনুষের গোশত নিয়ে এস। হযরত মুসা আ. অনেকের কাছে চাইলেন। কিন্তু কেউ নিজের শরীরের গোশত কেটে দিতে রাজি হল না। আশাহত হয়ে তিনি একটি পাহাড়ের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এক ব্যক্তি পাহাড় থেকে ডাক দিল, হে মুসা! এদিকে আস। আমার কাছ থেকে গোশত নিয়ে যাও। অতপর ঐ ব্যক্তি নিজের শরীর কেটে গোশতের একটি টুকরা দিয়ে দিলেন। ঐ টুকরা নিয়ে হযরত মুসা আ. আল্লাহর কাছে পেশ করলেন। তখন আল্লাহ বললেন, হে মুসা! তুমিও তো একজন মানুষ। তুমি তো দিতে পারনি। যে দিয়েছে সে কে জান? সে আমার আবদুল কাদের জিলানী!!!
পুরো কিসসাটির আগাগোড়া নির্জলা মিথ্যা। এটি এতই মারাত্মক কথা যে, কোনো মুসলিম তা উচ্চারণ করতে পারে না। অথচ কিছু বিকৃত চিন্তার মানুষ এ জাতীয় কিছু বর্ণনা করে দুর্বল বোধ-বুদ্ধির অধিকারী মুসলমানদের পথভ্রষ্ট করে চলেছে। অথচ এ জাতীয় কথাবার্তা শোনামাত্রই বলা উচিত-
سبحانك، هذا بهتان عظيم سبحانك، هذا بهتان عظيم
হে আল্লাহ! তুমি পবিত্র সত্ত্বা। এটি সুস্পষ্ট অপবাদ।
এটি হাদীস নয়
عند عند ذكر الصالحين تتنزل الرحمة
নেককারদের আলোচনাকালে রহমত নাযিল হয়
নেককার-বুযুর্গদের আলোচনার সময় অনেককে উপরোক্ত কথাটি হাদীস হিসেবে বলতে শোনা যায়। মুহাদ্দিসীনে কেরামের সিদ্ধান্ত হল, এটি হাদীস নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত-এর কোনো সনদ নেই; বরং এটি প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা রাহ. (১০৭ হি.-১৯৮ হি.)-এর উক্তি। (হিলয়াতুল আউলিয়া ৭/৩৩৫; আততামহীদ ১৭/৪২৯)
এই কারণে মুহাদ্দিস ও হাফেযে হাদীস আল্লামা ইরাকী রাহ. বলেন-
ليس له ليس له أصل مرفوع، وإنما هو قول سفيان بن عيينة.
‘মারফূ’ (সরাসরি নবীজী থেকে বর্ণিত) হাদীস হিসেবে এর কোনো ভিত্তি নেই; বরং এটি সুফিয়ান ইবনে উয়াইনাহ রাহ.-এর একটি উক্তিমাত্র।’ (তাখরীজে ইরাকী-ইহয়াউ উলূমিদ্দীন ৩/৩২৯; ইতহাফুস সাদাতিল মুত্তাকীন (৬/৩৫০-৩৫১)
হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ.সহ অন্যান্য মুহাদ্দিসও একই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। (আলমাকাসিদুল হাসানা ৪৬৭; আল ফাওয়াইদুল মাজমুআ ২/৬২২) আরো দেখুন : মোল্লা আলী কারী, আল মাওযূআতুল কুবরা ৮৩, তাহের পাটনী, তাযকিরাতুল মাওযূআত ১৯৩
তবে মূল কথাটি যেহেতু অভিজ্ঞতার দ্বারা প্রমাণিত। তাই হাদীস হিসেবে বর্ণনা না করে বুযুর্গদের উক্তি হিসেবেই বর্ণনা করা উচিত। নির্ভরযোগ্য সূত্রে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত না হলে তা হাদীস হিসেবে বলার কোনো সুযোগ নেই। collection from masik al kawser
0 comments:
Post a Comment