Thursday, September 1, 2011

আসলে কি নারী উন্নয়ণ নীতিমালায় ইসলাম বিরোধী কিছু আছে ?


আমরা মুসলমান। ইসলাম আমাদের ধর্ম। আল্লাহ আমাদের রব। কুরআন আল্লাহ তা’আলার কালাম, আসমানী গ্রন্থ, আমাদের সংবিধান। মুসলমান মাত্রই বিশ্বাস করে যে, আল্লাহর কালাম “কুরআন” সব সন্দেহ-সংশয় ও ভুল ত্রুটির উর্দ্ধে। কিয়ামত পর্যন্ত এতে কোন সংশোধন, সংস্কার, সংযোজন-বিয়োজন করা যাবে না।
নারী-পুরুষ মহান আল্লাহর রাব্বুল আলামীনের সৃষ্টি। উভয়ই আল্লাহ তাআলার বান্দা-বান্দী। আর সৃষ্টির ভাল-মন্দ স্রষ্টা ভাল জানেন। পবিত্র কুরআন পাকে ইরশাদ হচ্ছে, ‘যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি কি জানেন না ? অথচ তিনিই সূক্ষ্মদর্শী ও সবকিছুর ব্যাপারে সম্যক অবগত।’ (সূরা মূল্‌ক : ১৪)
আল্লাহ তাআলা তাঁর এ জানার আলোকেই সৃষ্টি করেছেন নারী-পুরুষ। এবং প্রত্যেককে যার যার কাজ ও দায়-দায়িত্ব হিসেবে দিয়েছেন মেধা, মনন, মানসিকতা ও শারীরিক গঠন। নারী মা হবেন। এজন্য মাতৃত্বের যাবতীয় গুণাবলী দিয়ে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। যেসব গুণাবলী পুরুষের মধ্যে নেই। আর পুরুষ বাবা হবেন। এজন্য সৃষ্টিগতভাবে আল্লাহ তা’আলা পুরুষের মধ্যে পিতৃত্বের যাবতীয় গুণাবলী দিয়েছেন। যা নারীদের মধ্যে সহজাতভাবে নেই। সুতরাং নারী-পুরুষের মধ্যে জন্মগতভাবেই পার্থক্য আছে। আছে ভিন্নতা। যেমন নারীর কাজ হলো- গর্ভে সন্তান ধারণ, সন্তান প্রজনন, স্থন্য দান ও সন্তান লালন-পালন। আর পুরুষের কাজ হলো- মা ও সন্তানের যাবতীয় ভরণপোষণের খরচ বহন ও এর ব্যবস্থাকরণ। সুতরাং স্বাভাবতই কর্মের ভিন্নতার কারণে নারী-পুরুষের কর্মক্ষেত্রেরও ভিন্নতা এসে যায়। আর তা হলো- নারীর কর্মক্ষেত্র হল ঘর; পুরুষের কর্মক্ষেত্র বাহির। এজন্য কুরআন বলে, “নারীরা! তোমরা ঘরে অবস্থান কর”। অন্যত্র পুরুষদের বলা হয়েছে, “তোমাদের নামায আদায় হয়ে গেলে বের হয়ে যাও ও আল্লাহর দেওয়া রিযিক তালাশ কর”। এ হলো নারী-পুরুষের সহজাত ভিন্নতা ও পার্থক্য।

সহজাত এসব ভিন্নতার কারণে নারী-পুরুষের বিধি-বিধান ভিন্ন, নিয়মনীতি ভিন্ন। সমপ্রতি বাংলাদেশে বহুল আলোচিত সমালোচিত নারী উন্নয়ন নীতিমালা যা গত ৭ই মার্চ মন্ত্রীসভায় অনুমোদিত হওয়ার পর উলামায়ে কেরাম কুরআন, সুন্নাহ ও ইসলামী শরীয়ার সাথে সাংঘর্ষিক বলে এ নীতিমালা বাতিল করার দাবী তুলেছেন। সে নালী নীতিমালা জাতিসংঘের প্রণীত সিডও (নারী-পুরুষের বৈষম্য দূরীকরণ)’রই প্রতিধ্বণি মাত্র। এ নীতিমালায় বারবার এ কথা বিবৃত হয়েছে যে, সিডও-র প্রচার ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এমনকি প্রয়োজনে সিডও বাস্তবায়নে দেশীয় আইন সংশোধন, পরিবর্তন বা নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে। সিডও’র মূল বক্তব্য হল দু’টি :
১। নারী পুরুষের সকল বৈষম্য দূর করা।
২। সর্বক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠা করা।
এ দু’টো মূল কথাই ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। বরং মানবতা ও সৃষ্টিশৈলী বিরোধী। নারী-পুরুষের সকল বৈষম্য দূর করে সকল ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করা কি আদৌ সম্ভব? এটা কি আদৌ কোনো যুক্তিসঙ্গত কথা?  কোন সুস্থ বিবেক সম্পন্ন মানুষ কি এমন দারী তুলতে পারে? এরপরও এদেশের এম.পি. মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত বলেছেন যে, নারী নীতিমালায় ইসলাম বিরোধী কিছুই নেই। আমরা বলব, যেহেতু এ নীতিমালা সিডও’রই প্রতিচ্ছবি বাস্তবায়নের অঙ্গীকারের একটি কৌশল মাত্র আর সিডও’র লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও মূল চিন্তা-চেতনা ইসলামী চিন্তা-চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থী, সেহেতু এ নারী উন্নয়ন নীতিমালা পুরোটাই ইসলাম বিরোধী। অবশ্য নীতিগত দিকটা পাশ কেটে গেলেও ইসলামী বিশেষজ্ঞদের গবেষণায় এ নীতিমালায় কমপক্ষে ১৯টি ধারা/উপধারা কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী। এর মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য কয়েকটি ধারা এখানে তুলে ধরছি।
  •    ইসলাম পৈতৃক উত্তরাধিকারে নারীকে পুরুষের অর্ধেক দিয়েছে। আর এ নীতিমালায় নারীকে পুরুষের সমান দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
  •    নারী নীতিমালার ১৮.১ এ বলা হয়েছে, বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে আইনের কঠোরতা প্রয়োগ করা। অথচ ইসলামে বাল্যবিবাহের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করলেও অভিভাবক কর্তৃক সম্পাদিত হলে কঠিন শর্ত সাপেক্ষে এর বৈধতা অনুমোদন করে। এ নীতিটি ও কুরআন-সুন্নাহ এমনকি রাসূল (স.) এর আমলের সাথেও সরাসরি সাংঘর্ষিক।
  •   নীতিমালার ৭.২ ধারাতে আছে, “মা কর্তৃক সন্তানকে নাগরিকত্ব প্রদানের বিধান সন্নিবেশিত করা হলো”। অথচ কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, “তোমরা তাদেরকে তাদের  পিতৃ পরিচয়ে ডাক। এটাই আল্লাহ তাআলার কাছে ন্যয় সঙ্গত”। নীতিমালার এ ধারাটিও সপ্‌মূর্ণ কুরআন-সুন্নাহ’র সাথে সাংঘর্ষিক। মুসলমানদের এদেশে বৈধ বিবাহের মাধ্যমে সন-ান হয়। এদেশের ৯৫% মানুষের পিতৃ পরিচয় আছে। তারা হালাল ও বৈধ সন্তান। সুতরাং মাতৃ পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। অবশ্য সিডও’র ভূক্ত পশ্চিমা দেশগুলোতে এ নীতির প্রয়োজন থাকতে পারে। সেখানকার অধিকাংশ মানুষই পিতৃ পরিচয়হীন। দেশে এ নীতি চালু হলে ‘লিভ টুগেদার’ আস্কারা পেয়ে যাবে। ফলে এদেশেও জারজ সন-ানের পরিমাণ বেড়ে যাবে ও ইসলামের পারিবারিক কাঠামো ভেঙ্গে যাবে। যা আজ পশ্চিমা দেশগুলোর সামাজিক চিত্রে দেখা যাচ্ছে।
  •   সুদীর্ঘ এ নীতিমালার কোথাও নারীর ইজ্জত-সম্ভ্রম হিফাজতের আসমানী রক্ষাকবজ পর্দা বিধানের কথা উল্ল্যেখ নেই। বরং উল্টো নারীকে ঘর ছাড়া করা ও টেনে বাহিরে নিয়ে আসার কথা আছে একাধিক স্থানে। সুতরাং নারী বেপর্দা হওয়া ও বাহিরমুখী হওয়া সম্পূর্ণ কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী। দেশে এ নীতি চালু হলে ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন, যৌন হয়রানী, ইভটিজিং শতগুণে বেড়ে যাবে। যেমন নীতিমালার ২২.৩ এ আছে, “সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে নারীর বর্ধিত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।”
  •   ২২.৪ ধারায় নাটক ও চলচ্ছিত্র নির্মাণে (যেখানে বেগানা পুরুষের সাথে মেলামেশা করতে হয় এবং যা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ) নারীকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা করা। এছাড়াও এ নীতিমালা এ নীতিমালায় যৌতুক ও পতিতাবৃত্তির প্রতি উস্কে দেওয়া হয়েছে।

* শাকদিয়ে মাছ ঢাকার অপচেষ্টা *
  • নীতিমালার ২৩.৫ ধারায় আছে, “সম্পদ, কর্মসংস্থান বাজার ও ব্যবসায় নারীকে সমান সুযোগ ও অংশীদারিত্ব দেওয়া।”
  • ২৫.২ এ আছে “উপার্জন, উত্তরাধিকার এবং বাজার ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্জিত সম্পদের ক্ষেত্রে নারীকে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রদান করা। বোধ হয় এ দু’টো ধারা থেকেই নীতিমালা অনুমোদিত হওয়ার পরদিন বেতার, টেলিভিশনসহ পত্র-পত্রিকায় বিশেষভাবে দেশের প্রধান জাতীয় পত্রিকা তথা- প্রথম আলো, যুগান্তর ও কালের কান্ঠে খবর প্রচার করা হয় এভাবে : “ভূমিসহ সম্পদ-সম্পত্তিতে ও উত্তরাধিকারে নারীর সমান অধিকার স্বীকৃতি দিয়ে নারী উন্নয়ন নীতিমালা ২০১১ খসড়া অনুমোদন করেছে সন্ত্রীসভা”। দেশের বিজ্ঞ আলেম-উলাম ও ইসলামী বিশেষজ্ঞগণ ঠিক তাই বুঝেছেন যা বুঝেছে বাসস সহ প্রায় সব পত্র-পত্রিকা কর্তৃপক্ষ। পত্রিকার এসব শিরোনামের উপর সরকার পক্ষের কেউ কোন প্রতিবাদ করেনি। কিন্তু যখনই আলেম-ওলামাগণের  পক্ষ থেকে বলাবলি শুরু হল যে এটা কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিক তখনই সরকার ২৩.৫ “সম্পদ” শব্দের অস্পষ্টতার সুযোগ নিয়ে জনগণকে বোকা বানানোর অপকৌশল অবলম্বন করল আর বলল,এখানে সম্পদ বলা হয়েছে উত্তরাধিকারের কথা বলা হয়নি। এক পর্যায়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও বলে ফেললেন যে, “নীতিমালায় ইসলাম বিরোধী কিছু নেই।”
অযথা কথা বাড়িয়ে গোজামিল দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করবেন না। সাহস থাকলে পরিষ্কার ভাষায় উল্ল্যেখ করে দিন যে, “পৈতৃক সম্পদের ক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নাহ মাফিক বন্টন হবে।” সব ঝগড়া মিটে যাবে। মু’মিন-মুসলমানের প্রাণের দাবী পূরণ হবে।
এছাড়া সবক্ষেত্রে নারীর সমান অধিকারের ঘোষণার মাধ্যমে মুসলিম উত্তরাধিকার আইনকে অকার্যকর করাই যে সিডও’র সনদের মূল টার্গেট তাতো অন্ধদেরও সহজেই অনুমেয়।
নারী উন্নয়ন নীতিমালা ২০১১  এর মূল ফাইলটি এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন।

0 comments:

Post a Comment

 

© 2009 Islam And Computing । Science without Religion is Lame, Religion without Science is Blind | Design by: Islam And Computing

^Back to Top