Tuesday, May 3, 2011

যিন্দা লাশ

যিন্দা লাশ

অনেক ‘পীর’ আছেন যারা নিজের দলে লোক ভিড়াবার জন্যে নানা রকম ফন্দি এঁটে থাকেন। এরুপ একজন পীর নিজের পীরত্ব প্রচারের জন্যে এক কৃত্রিম কেরামতির অবতারণা করলেন। তিনি সেজে গুজে এক নতুন রাজ্যে প্রবেশ করলেন। তার ‘শিষ্য’ কে কাফনের কাপড় পরিয়ে লাশ-বাহী খাটে শোয়ালেন। মরা-কান্না কাঁদাবার জন্যে কয়েকজন লোক নিযুক্ত করলেন। এরপর জানাযা পড়ার জন্যে লোকজন ডাকা হল। বিশাল জনতা যখন জানাযা পড়ার অপেক্ষা করছে তখন পীর সাহেব হঠাৎ করে খাটের কাছে আবির্ভূত হলেন এবং লাশকে লক্ষ্য করে বললেন :
কুম বি-ইযনিল্লাহ-
অর্থাৎ-‘আল্লাহর ইচ্ছায় উঠে দাঁড়াও।’
শোনা মাত্রই লাশটি কাফনের কাপড় ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো এবং হাত তুলে জনতাকে সালাম জানালো।
সরলমান জনগণ পীরের এই কেরামতি দেখে চারিদিকে ডঙ্কা বাজিয়ে দিল। দূর-দূরান- থেকে লোকজন এসে ভীড় করতে লাগলো। রাজ্যের রাজাও এই নবাগত পীরের কাহিনী শুনতে পেলেন। তিনি ছিলেন খুব বুদ্ধিমান। পীরকে তার দরবারে ডেকে পাঠালেন।
পীর সাহেব মনে মনে ভাবলেন তার কৌশলটি বৃথা যায়নি। রাজাও তার ভক্ত হয়ে পড়েছেন। তিনি খুশীমনে রাজার দরবারে হাজির হলেন।
রাজা বললেন, “যুদ্ধে আমার সেনা-বাহিনীর অনেক লোক মারা যায়। ফলে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে থাকে। কারণ ঐরুপ ট্রেনিং প্রাপ্ত সৈন্য আর পাওয়া যায় না। আপনি এ দেশেই থাকুন। ওদেরকে যিন্দা করাই আপনার কাজ। আপনার ভরণ-পোষণ এবং যাবতীয় খরচ-পত্র আমরা বহন করবো।”
রাজার কথা শুনে পীর সাহেবের পায়ের তলা থেকে যেন মাটি সরে গেল। তিনি দুই চোখে অন্ধকার দেখতে লাগলেন এবং সুযোগ বুঝে গোপনে রাতারাতি দেশ ছেড়ে পালালেন।
-আল এফাযাতুল এওমিয়াহ, খন্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৫৫।
 
পাঠক এবার প্রকৃত পীরের সংজ্ঞা জেনে নিন। পীরের ব্যক্তিত্ত্বে নিম্নলিখিত গুণ অবশ্যই থাকতে হবে :

১। আলেম হতে হবে। আলেমের সংজ্ঞা হল- কমপক্ষে তিনটি কিতাব এমনভাবে শিক্ষা করতে হবে যেন তা’ সুন্দরভাবে ছাত্রদেরকে পড়াতে পারেন এবং ছাত্ররা তার পড়াবার যোগ্যতার পক্ষে স্বাক্ষী দিবে। কিতাব তিনটি হল (ক) তাফসীরে জালালাইন (খ) মেশকাত শরীফ এবং (গ) হেদায়া (উভয় খন্ড)।
২। প্রত্যেক ফরয, ওয়াজিব এবং সুন্নতের পুরাপুরি পাবন্দ থাকবে এবং হারাম ও মাকরুহ (অপছন্দনীয়) কাজ সমূহ সম্পূর্ণভাবে বর্জন করবে।
৩। মানুষকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য অপর এমন একজন পীর কর্তৃক অনুমতি প্রাপ্ত হতে হবে যার পর্যায়ক্রমিক পীরের প্রথম পীরটি স্বয়ং রাসুল (সা:) কর্তৃক অনুমতি প্রাপ্ত হয়েছেন।
আর সেই পীরের দরবারে আলেমগণ যান কিনা দেখতে হবে। কারণ পীরের স'ান আলেমের উর্দ্ধে। আলেম হওয়ার পরও দীর্ঘদিন পীরের সান্নিধ্যে থেকে ‘এছলাহ্‌’ লাভের জন্য সাধনা করতে হয়। এই জন্য আলেমগণও প্রকৃত পীরের দরবারে গিয়ে উপকৃত হন। মুরদিের কাছতেকে টাকা-পয়সা বা দুনিয়ার কোনরুপ সুয়োগ-সুবিধা পাওয়ার ইচ্ছা থাকেনা প্রকৃত পীরের। তিনি ইচ্ছাকৃত কোন     ‘কেরামত’ প্রকাশ করেন না। এমনকি যদি অনিচ্ছাকৃত তার থেকে কোন কেরামত প্রকাশ হয়ে যায় তবে তিনি মনে কষ্ট পান। তাঁর মজলিসে বসলে অন-রে আল্লাহর ভয় জাগরিত হয়, পরকালেন কথা মনে পড়ে যায় এবং অন-র অনাবিল শানি-তে ভরে উঠে।
সূত্র : যিয়াউল কুলূব ও কুছদুস সাবীল।

0 comments:

Post a Comment

 

© 2009 Islam And Computing । Science without Religion is Lame, Religion without Science is Blind | Design by: Islam And Computing

^Back to Top